আন্দোলনরত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচ কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের আওতায় এসেছেন। এ নিয়ে মোট ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
দুদকের অভিযোগ, এসব কর্মকর্তা ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বৈধ আয়ের বাইরে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকির সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন।
নতুন পাঁচ কর্মকর্তারা হলেন—বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, এক্সাইজ কমিশনার মো. মামুন মিয়া এবং কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
এই পাঁচজনের মধ্যে সেহেলা সিদ্দিকা হলেন সম্প্রতি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী সাধারণ সম্পাদক।
সরকার এর আগে এনবিআর সেবাকে "অত্যাবশ্যকীয়" ঘোষণা করে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থার হুমকি দেয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করে দাবিগুলো আলোচনায় আনতে বাধ্য হয়।
এর আগে ১ জুলাই, দুদক আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছেন এনবিআরের লার্জ ট্যাক্সপেয়ার ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া, এনবিআর সদস্য লুৎফুল আজিম, এনবিআর সিআইসি-এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬-এর উপ-কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাসান।
২৯ জুন, দুদক প্রথম দফায় ছয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের অনির্বাচিত সরকার গঠনের পর থেকেই মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহারে দুদককে ব্যবহার করা হচ্ছে, অপরদিকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বিদেশ যাত্রা নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে।
তবে তিন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিব ও ইউনূসের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে দুদক এখনো নীরব এবং নিষ্ক্রিয়।
সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও সাবেক আমলারা এই আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগেই যদি নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়, তাহলে এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখতে হবে। কেউ কেউ দুদককে সংস্কার হওয়ার আগেই অকার্যকর করে দিতে চায়।”
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (আইন ও প্রসিকিউশন) মঈদুল ইসলাম বলেন, “সরকার বদল হলেও দুদকে কোনো বাস্তবিক পরিবর্তন আসেনি। একই ব্যক্তিরা বছরের পর বছর অধিগ্রহণে থেকে নিয়ম ভঙ্গ করে তদন্ত করছে।”